Arthur Rahman
Correspondent ar EcoBangla
August 5, 2025
136
0
প্রতিটি মানুষের দৈহিক ও মানসিক সুস্থতার অন্যতম ভিত্তি হল খেলাধুলা। শুধুমাত্র বিনোদনের জন্য নয়, বরং সুন্দর ও মানবিক সমাজ গঠনে একটি শক্তিশালী হাতিয়ার হচ্ছে খেলাধুলা। যে কোন ধরনের সামাজিক খেলাধুলাই বাংলাদেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নের স্তম্ভ। সকল ধরনের খেলার মধ্যে ম্যারাথন বাংলাদেশ সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সামাজিক জাগরণ সৃষ্টি করেছে। এটি যে কেবল মাত্র একটি খেলার আয়োজন বিষয়টা তা নয়, বরং সুস্বাস্থ্য, সামাজিক পরিবেশ, সংহতি ও সচেতনতার চিহ্নও বহন করে। প্রযুক্তির সম্প্রসারণের ফলে বাংলাদেশের শিশু-কিশোর ও তরুণরা মাঠের খেলাধুলা এবং বিনোদন থেকে দিনদিন দূরে সরে যাচ্ছে।এর পেছনে অবশ্য অন্যান্য কারণ রয়েছে যেমন, পর্যাপ্ত মাঠের অভাব, সুযোগের অভাব, কিংবা শারীরিক অনুশীলনের বিষয়ে সচেতনতার অভাব। তাই, এই সমাজকে আবারো আগের মত খেলাধুলার মূলধারায় ফিরিয়ে আনার জন্য প্রয়োজন আধুনিক, সমন্বিত ও সচেতনতার বার্তাসমৃদ্ধ বিভিন্ন খেলাধুলার আয়োজন, যেমনটি হচ্ছে বিশ্বের অন্যান্য উন্নত দেশগুলোতে। আর এই রকম উন্নত সামাজিক খেলা আয়োজনের অন্যতম শক্তিশালী উপকরণ হল "ম্যারাথন ইভেন্ট"। বাংলাদেশের সামাজিক প্রেক্ষাপটে ম্যারাথনের জনপ্রিয়তা বাড়ছে সামাজিক সচেতনতা সমৃদ্ধ কিছু ম্যারাথন ইভেন্ট, যেমন ক্লাইমেট ম্যারাথন, রান ফর অটিজম ম্যারাথন, ঢাকা ম্যারাথন, বেঙ্গল আর্ট সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশে জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। ম্যারাথনের এই সকল আয়োজনে অংশগ্রহণ করছে সমাজের নানা পেশা, নানা বয়সের মানুষ- শিক্ষার্থী, পুরুষ, নারী, বয়স্ক ও প্রতিবন্ধী পর্যন্ত। উদাহরণ হিসেবে, “ঢাকা হাফ ম্যারাথন” এর কথা বলা যায়। ২০২৩ সালের এই ম্যারাথন দৌড়ে প্রায় পাঁচ হাজারের উপর মানুষ অংশগ্রহণ করে। এই ম্যারাথনের আয়োজক ছিল বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও বেশ কিছু কর্পোরেট ব্র্যান্ড। মূল বার্তা ছিল: “সুস্থ দেহ, সচেতন মন, আগামীর বাংলাদেশ“। ঢাকা সামার হাফ ম্যারাথন- ২০২৫ এটি একটি ভার্চুয়াল ম্যারাথন, যা আগামী ১৫ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এই ম্যারাথন দৌড় সমাজের সকলের জন্যই উন্মুক্ত , যে কেউ দেশের যে কোন স্থান থেকে অংশগ্রহণ করতে পারে। এই প্রতিযোগিতায় তিন ধাপে দূরত্ব নির্ধারণ করা হয়েছে, ২১.১ কিলোমিটার, ১৫ কিলোমিটার, ও ৭.৫ কিলোমিটার। এই ম্যারাথনে অংশগ্রহণকারী সকল প্রতিযোগী মেডেল, ই- সার্টিফিকেট এবং জার্সি পাবেন। স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধিতে ম্যারাথনের গুরুত্ব ম্যারাথনের অন্যতম উদ্দ্যেশ্য হচ্ছে জনসাধারণের স্বাস্থ্য সচেতনতা বাড়ানো। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিবেদন বলছে, বাংলাদেশে প্রায় প্রতি ৩ জন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের মধ্যে ১ জন উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন। তাই ম্যারাথন ইভেন্ট নিয়মিত আয়োজনের ফলে এ সমাজের মানুষ হাঁটা, দৌড়ানো, এবং শরীরচর্চার প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠতে পারে। স্বাস্থ্যবান সমাজ বিনির্মাণে ম্যারাথনের গুরুত্ব এর মাধ্যমে মানুষ অনুশীলনে নিয়মিত হওয়ার আগ্রহ পায়। শরীরচর্চা বিষয়টি এক প্রকার সামাজিক উৎসবে পরিণত হয়। হতাশাগ্রস্ত মানুষের মানসিক চাপ এবং হতাশা কমায়। এতে একই পরিবারের সবার অংশগ্রহণ করার সুযোগ থাকে বলে সম্মিলিত সচেতনতা বৃদ্ধির সুযোগ থাকে। খেলাধুলার মাধ্যমে যুব সমাজের নেতৃত্বে ইতিবাচক বিকাশ ঘটে বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৬০% মানুষের বয়স ২৫ বছরের আশেপাশে। কিন্তু এই সমাজের তরুণরা মোবাইলের মত প্রযুক্তিতে আসক্ত হয়ে অলস জীবন অতিবাহিত করছে। ম্যারাথন এই তরুণ সমাজের মধ্যে স্বাস্থ্য সচেতনতা বাড়ানোর আশাপাশি নেতৃত্ব গঠন করতে সাহায্য করে। স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে ম্যারাথন চালু করলে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন ভাবে উপকৃত হতে পারবে। যেমন, তাদের মধ্যে স্বাস্থ্য ও ক্রীড়া সংস্কৃতি ফিরবে। দলগত কাজের প্রতি আগ্রহ বাড়বে। সামাজিকভাবে ইতিবাচক ও প্রতিযোগিতামূলক মানসিকতা গড়ে উঠবে। সামাজিক বৈষম্য দূরীকরণে ম্যারাথনের গুরুত্ব এ দেশের সমাজের প্রতিটি স্তরে রয়েছে অর্থনৈতিক ও সামাজিক বৈষম্য। ম্যারাথন এমন একটি দৌড় যেখানে সকল পেশা, ধর্ম, বর্ণ, নারী-পুরুষ সকল শ্রেণীর মানুষ এমনকি শারীরিক ভাবে অক্ষম মানুষও অংশগ্রহণ করতে পারে। এতে করে সমাজে একধরনের সহানুভূতি ও সকলের প্রতি সকলের মিলবন্ধনের আবহ তৈরি হয়। ম্যারাথনের মাধ্যমে পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তনে জনসচেতনতা বৃদ্ধি জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। অথচ এই দেশের মানুষের মধ্যে পরিবেশ নিয়ে সচেতনতা নেই বললেই চলে। পরিবেশের প্রতি ইতিবাচক বার্তা দিতে গ্রীন ম্যারাথন, ক্লাইমেট রানের মতন ম্যারাথন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। যেমন, প্লাস্টিকমুক্ত পানির জার শূন্য দূষণ এবং শূন্য বর্জ্য লক্ষ অর্জনে সচেতনতা বাড়ায়। বৃক্ষরোপণ, পরিচ্ছন্নতা অভিযান ও কার্বন ফুটপ্রিন্ট কমানোর মতো কার্যক্রম চালু হয়। সমাজের তরুণ প্রজন্ম পরিবেশ সামাজিক এবং মানবিক কাজে মানুষকে আরো সক্রিয় করে বাংলাদেশে এই ম্যারাথন অনেক সময় চ্যারিটি ফান্ড তৈরি করে। পরবর্তীতে এই ফান্ড দুঃস্থ শিশু, অটিজম, ক্যান্সার রোগী বা প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য সহায়তা করতে ব্যবহার করা হয়।উদাহরণ হিসেবে“Run for Autism” এর কথা বলা যায়। এই ম্যারাথন আয়োজন করে অটিজম বিষয়ে সচেতনতা ও ফান্ড তৈরি করা হয়, যা পরবর্তীতে হাজারো শিশুর চিকিৎসায় ব্যবহার করা হয়। ম্যারাথনের মাধ্যমে সমাজ ও দেশের যেসব পরিবর্তন আনা যায় সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও স্থানীয় সংগঠন যদি নিয়মিত ম্যারাথনের আয়োজন করে, তবে সুস্থ্য সমাজ ও সুন্দর জাতি গঠন করা সহজ হবে। মানুষে মানুষে সামাজিক বন্ধন মজবুত হবে। পরিবেশ রক্ষায় মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়বে। তরুণ ও নারীদের নেতৃত্ব বিকশিত হবে। বর্তমানে ম্যারাথন শুধুমাত্র একটি প্রতিযোগিতা নয়; এটি বাংলাদেশের সমাজ পরিবর্তনের এক নতুন পথ প্রদর্শক। ম্যারাথন এই সমাজে ঐক্য, মানবতা, স্বাস্থ্য ও পরিবেশ সহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভগুলোকে একত্রিত করে একটি সুন্দর ভবিষ্যত নির্মাণে পথ দেখায়। দেশের একটি সুন্দর প্রজন্ম গঠনে ম্যারাথন হয়ে উঠতে পারে শহর, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের একটি উৎসব। কারণ এই একটি দৌড় বদলে দিতে পারে একটি সমাজ।
Please sign in to leave a comment
No comments yet. Be the first to share your thoughts!
No related articles found.